দোজখের বিবরণ

গোনাহগার বেঈমানদের সমুচিত শাস্তি দিবার জন্য আল্লাহ পাক যে কঠিন আজাবের স্থান নির্দিষ্ট করিয়া রাখিয়াছেন তাহাই দোজখ । ইহা অতিশয় কষ্টের স্থান এবং বিভিন্ন বিভীষিকাময় জিনিষে পরিপূর্ণ। সুখ-শান্তি, আরাম-আয়েশ বলিতে সেখানে কিছুই নেই । দোজখ আল্লাহপাকে গজবের আগুণে প্রজ্জ্বলিত । যাহারা আল্লাহপাকের নাফরমানী করিয়া নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত না হইয়া (তওবা না করিয়া)_ মরিয়া যাইবে, তাহারা আখেরাতে অনন্তকাল দোজখের কঠোর শাস্তি ভোগ করিবে ।পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফে দোজখ সমন্ধে যে সকল বিবরণ পাওয়া যায়, তাহা শুনিলে শরীর শিহরিয়া উঠে । দেজখের সমান্যতম আগুণ দুনিয়ায় আনিয়া সাত সমুদ্রের পানিতে ৭০ বার ধৌত করিলে উহার উত্তাপ দুনয়ার আগুন হইতে সহস্রগুণ বেশী থাকিবে ।দুনিয়ার সমস্ত কাষ্ঠ একত্র করিয়া প্রজ্জ্বলিত করিলে যে পরিমাণ উত্তাপ সৃষ্টি হইবে, দোজখের আগুণের উত্তাপ তাহা হইতেও সহস্রগুণ অধিক ।

একদিন হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদিগকে সঙ্গে লইয়া বসিয়া কথোপকথোন করিতেছিলেন, এমন সময়ে তাহারা একটি ভীষণ শব্দ শুনিতে পাইলেন । সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করিলেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইহা কিসের শব্দ? তদুততরে হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিলেন যে, ৭০ বৎসর আগে দোজখের কিনারা হইতে একখানা পাথর নীচের দিকে পড়িতে আরম্ভ করিয়াছিল, অদ্য ৭০ বৎসর পরে সেই পাথর খানা দোজখের তলায় যাইয়া ঠেকিল, ইহা তাহারই শব্দ । ইহা হইতে দোজখের গভীরতা সম্বন্ধে কিছুটা অনুমান করা যায়।

আল্লাহপাক তাহার পাক কালাম কোরআন মজিদে ফরমাইয়াছেনঃ

وَقِيْلَ لَهُمْ ذَوقُوْا عَذَابُ النَّا رِالَّذِىْ كُنْتُمْ بِهِ تَكْذِبُوْنَ

-অনুবাদঃ পাপীদিগকে বলা হইবে, তোমরা এখন দোজখের আগুণের স্বাদ গ্রহন কর ।

আল্লাহ ও রাসূলের কথায় বিশ্বাস কর নাই, কোরআন ও হাদীসকে মিথ্যা জানিয়াছিলে, দোজখের আজাবকে তখন মিথ্যা জানিয়াছিলে, এখন তাহার শাস্তি ভোগ কর; দেখ কে তোমাদিগকে সাহায্য করিতে আসে ।

হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিয়াছেন, দোজখের লোকদিগকে জকুম নামক এক প্রকার বৃক্ষের ফল আহার করিতে দেওয়া হইবে । ইহা এত তিক্ত যে, যদি উহার এক টুকরা দুনিয়ার পানিতে ফেলিয়া দেওয়া হয়, তবে দুনিয়ার সমস্ত পানি তিক্ত হইয়া যাইবে ।এক সময়ে হযরত জিব্রাইল (আঃ) হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নিকট আগমণ করিলেন, তখন তাহার চোহারা অত্যন্ত খারাপ দেখাইতেছিল । হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করায় জিব্রাইল (আঃ) বলিলেন, দোজখের অগি্নভয়ে আমার অন্তকরণ থর থর করিয়া কাঁপিতেছে । হযরত নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলিলেন যে, দোজখীদিগকে যে কাপড় পরিধান করান হইবে, তাহার এক ইঞ্চি পরিমাণ যদি দুনিয়ার এক প্রান্তে লটকাইয়া দেওয়া হয়, তবে তাহার দুর্গন্ধে দুনিয়ার সকল প্রাণী মরিয়া যাইবে । আর দোজখীদিগকে যে জিঞ্জির দ্বারা বন্ধন করা ইহবে, তাহার একতলা পরিমাণ যদি দুনিয়ার সর্বোচ্চ পর্বতের উপর স্থাপন করা যায়, তবে পর্বত ভষ্ম হইয়া সপ্তস্তর জমিন ভেদ করিয়া দোজখের জিঞ্জির দোজখে গিয়া পোঁছবে ।

হযরত আদম (আঃ) যখন প্রথম দুনিয়াতে আগমণ করেন, তখন তাহার খাদ্য পাকাইবার জন্য আগুনের প্রয়োজন হইলে আল্লাহপাকের আদেশে হযরত জিব্রাইল (আঃ) দোজখের দারোগা মালেকের নিকট হইতে এক মটর পরিমাণ আগুন লইয়া সপ্ত সমুদ্রে ৭০ বার ধৌত করিয়া উহা দুনিয়ার পূর্ব প্রান্তে ‘ছাহেফ’ পাহাড়ের উপর রাখিলেন । তখই পাহার আগুনের উত্তাপ সহ্য করিতে না পারিয়া পুড়িয়া ভষ্ম হইয়া গেল । শুধু ধুম রহিয়া গেল, সেই ধুম হইতেই দুনিয়ার অগ্নির সৃষ্টি । দোজখের অগ্নির তেজ এত বেশী হইবার কারণ এই যে, পাথর দ্বারা ইহার ইন্ধন দেওয়া হয় । সকলেই জানেন যে, কাঠের  আগুনের  চেয়ে পাথরের কয়লার  আগুনের তেজ বেশী । আর শুধু খাঁটি পাথর দ্বারা যে অগ্নি প্রজ্জ্বলিত রাখা হইবে, তাহার তেজ আরও অধিক হওয়া স্বাভাবিক ।

দোজখীদিগকে গরম পানি ও দুর্গন্ধযুক্ত পুঁজ পান করিতে দেওয়া হইবে, যাহাতে তাহাদের নাড়ী-ভূড়ী সব খসিয়া পড়িবে । আর তাহাদের শরীর দুর্গন্ধে ভরিয়া যাইবে । প্রত্যহ তাহাদিগকে ৭০ বার করিয়া জ্বালাইয়া ফেলা হইবে, অতপর সেই মূহুর্তেই আবার পুর্বের মত শরীর হইয়া যাইবে । এদের সম্বন্ধে আল্লাহপাক বলিয়াছেনঃ

لاَيَمُوْ تُفِيْهَاوَلاَيَحْىَ

অনুবাদঃ ‘সেখানে তাহারা মরিবেও না, বাঁচবেও না।’সেখান হইতে উদ্ধার পাইবার জন্য তাহারা আল্লাপাকের নিকট ও শাস্তি প্রদানকারী ফেরেশতাদের নিকট কত কাকুতি মিনতি করিবে। কিন্তু কেহই তাহাদের কথায় কর্ণপাত করিবে না; বরং আল্লাহপাক তাহাদিগকে বলিবেনঃ –

فَذُوْقُوْ فَلَنْ نَذِيْدَ كُمْ اِلاَّ عَذَابَ

অনুবাদঃ হে গোণাহগারগণ! তোমরা দোজখের স্বাদ গ্রহণ কর, দোজখের শাস্তি ভোগ করিতে থাক । আমি তোমাদের আজাব শুধু বর্ধিতই করিব । দুনিয়াতে আমার কথা শুন নাই, কোরান হাদিস মান নাই, আজ তাহার ফল ভোগ কর ।

পাপীদিগকে দোজখে নিক্ষেপ করিলে তাহাদের হাত-পা বলিবে যে, দুনিয়ায় যেমন আল্লাহপাকের হুকুন মান নাই, আজ তেমন শাস্তি ভোগ কর । দোজখের উত্তাপে অস্থির হইয়া বৃষ্টি পার্থনা করিলে আকাশে কালো মেঘ দেখা দিবে এবং উহা হইতে অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছু দোজখীদের দেহে পতিত হইতে থাকিবে । ঐ সমস্ত সাপ বিচ্ছু একবার দংশন করিলে হাজার বৎসর পর্যন্ত তাহার যন্ত্রণা থকিবে, অথচ অনবরতই উহারা তাহাদিগকে দংশন করিতে থাকিবে ।

দোজখের সাতটি স্তর । উহার একটির নিম্নে অপরটি অবস্থিত । যে স্তর যত বেশী নিম্নে তাহার উত্তাপ ও শাস্তির পরিমাণ তত বেশী । একটি হইতে অপরটির উত্তাপ ৭০ গুণ বেশী ।

প্রথম দোজখের নাম “হাবিয়া” ফেরাউন-নমরুদ প্রভূতি কাফেরগণ এই দোজখে বাস করিবে ।

দ্বিতীয় দোজখের নাম “ছায়িরা” মুশরেকগণ এই দোজখে বাস করিবে ।

তৃতীয় দোজখের নাম “ছাকার” মুর্তিপূজারীগণ এই দোজখে বাস করিবে ।

চতুর্থ দোজখের নাম “জ্বাহীম” শয়তান ও অগ্নিপূজারীগণ এই দোজখে বাস করিবে ।

পঞ্চম দোজখের নাম “হুতামা” ইহুদিগণ এই দোজখে বাস করিবে ।

ষষ্ট দোজখের নাম “ওয়াইল” আমাদের আখেরী নবীর উম্মতগণের মধ্যে যাহারা গোনাহের কাজ করিয়া বিনা তওবায় মরিয়া যাইবে, তাহারা এই দোজখে বাস করিবে ।

সুত্র: তাম্বীহুল গাফেলীন

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply